চাকরীজিবীদের দিনের একটা লম্বা সময় কাটে সহকর্মীদের সাথে। ভালো, মন্দ, আনন্দ, দুঃখের সাথীও বলা চলে তাদের অনেকাংশেই। শিক্ষা জীবনের গন্ডি পার হয়ে এই কলিগরাই এক সময় হয়ে ওঠে আমাদের পরম আস্থার জায়গা। সবার মধ্যে যদি সম্পর্ক ভালো থাকে তাহলে কাজেও স্যাটিসফেকশন আসে। প্রতিদিন যে মানুষগুলোর সাথে আপনার কাজ করতে হচ্ছে, তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো হলে কর্মক্ষেত্রেও আপনি খুশি থাকবেন এবং প্রতিটি দিনই নতুন নতুন কাজ করতে মোটিভেশন পাবেন। সেই সাথে-
- চাকরি সংক্রান্ত স্ট্রেস কমে যাবে
- স্বাস্থ্য ভালো থাকবে
- সাইকোলজিক্যাল হেলথ ইমপ্রুভ হবে
- নতুন নতুন কানেকশন তৈরি হবে
- কাজে সফলতা পাওয়া যাবে
সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার উপায়
যে ধরনের কাজই আপনি করেন না কেন, যাদের সাথে কাজ করছেন তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখাটা খুবই জরুরি। যেভাবে এই সম্পর্ক ভালো রাখা যায়-
শুরু থেকেই সম্পর্ক ভালো রাখা
আপনি নিজে জয়েন করুন অথবা নতুন কোন সহকর্মী অফিসে আসুক, প্রথম দিন থেকেই সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা শুরু করতে হবে। আবার আপনি যখন নতুন কোনো পজিশনে কাজ শুরু করেন, তখন শুধু নতুন নতুন কাজ শিখবেন তাই নয়, কলিগদের সাথে যোগাযোগও রাখতে হবে, আবার ফ্রেন্ডলি রিলেশনও ক্যারি করতে হবে। ধরুন, আপনার কলিগরা সবাই দুপুরে কোথাও খাওয়ার প্ল্যান করেছে। অজুহাত দিয়ে প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করবেন না- এ ধরনের কিছু করবেন না। সবাই মিলে একসাথে গেলে কোয়ালিটি টাইম পাওয়া যাবে। একে অন্যকে আরও ভালোভাবে জানা হবে।
অন্যকে জানার জন্য সময় দিন
সহকর্মীকে যত ভালোভাবে জানবেন, তত অফিসের সোশ্যাল লাইফ ভালো হবে। তাদের প্রতি আগ্রহ দেখানোর অর্থ হচ্ছে বন্ধুত্বের দিকে প্রথম হাত বাড়িয়ে দেয়া। এটা করতে জটিল কোনো পদ্ধতি মেনে চলতে হয় এমন নয়। কখনো কাজের ফাঁকে হয়তো জিজ্ঞেস করলেন, এই সপ্তাহের ছুটিতে সে কী করছে বা কোন বইটি এখন পড়ছে। প্রশ্নগুলো খুব সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু যত সামনে এগোবেন, তত একজন আরেকজনের সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সহকর্মীকে সম্মান দিন
সহকর্মীকে সম্মান দিয়ে কথা বলা খুব জরুরি। যেখানে কাজ করবেন সবাইকেই যে আপনার পছন্দ হবে তা নয়। বরং অফিস এনভায়রনমেন্টে এটা খুবই নরমাল। তবে পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, যত চ্যালেঞ্জিংই হোক না কেন, তাদের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলুন, নিজের কাজের প্রতি পজিটিভ থাকুন। কেউ আপনাকে ছোট করলে বা বুলি করলে সুপারভাইজারকে জানান। চিৎকার চেঁচামেচি না করে শান্তভাবে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করুন। অন্যজন আপনার সাথে যে আচরণ করেছে, সেটাই যদি আপনিও তার সাথে করেন, তাহলে তার আর আপনার মধ্যে পার্থক্য কোথায় রইলো? তাই সম্মানের সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে যাওয়া কোনো সমাধান নয়।
ওভারশেয়ারিং করা থেকে বিরত থাকুন
কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে এবং মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ব্যক্তিগত সব আলোচনা আপনি সবার সাথে করবেন। যে দুই একজনের সাথে সম্পর্ক বেশ ভালো তাদের সাথে হয়ত পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আর কথা বলার সময় অবশ্যই পজিটিভ থাকার চেষ্টা করবেন। এতে প্রফেশনালি আপনি কলিগদের সাথে ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবেন।
আলোচনা সব সময় পজিটিভ রাখুন
কো ওয়ার্কারদের সাথে রিলেশন ইমপ্রুভ করার আরও একটি উপায় হচ্ছে পজিটিভ কনভারসেশন করা। এতে অফিসে কাজ করার মনোবল বাড়ে। ম্যানেজার হোক বা অন্য কোনো কো ওয়ার্কার- কারও সম্পর্কে যদি কমপ্লেইন করতেই থাকেন, তাহলে আপনাকে নিয়েও কেউ না কেউ এমন কথা বলবেই। যে কোনো ধরনের গসিপিং ও নেগেটিভ কনভারসেশন থেকে দূরে থাকলে অফিস রিলেশনশীপ পজিটিভ থাকবে এবং ওভারঅল জবে স্যাটিফেকশন আসবে।
নতুন সহকর্মীকে ওয়েলকাম করুন
যে কোনো নতুন জবই চ্যালেঞ্জের, বিশেষ করে যেখানে জয়েন করছেন, সেখানে যদি আগে থেকেই রিলেশনশীপ বিল্ড করা থেকে থাকে। যখন নতুন কেউ আপনার অফিসে জয়েন করে, তখন তাকে ওয়ার্কস্পেসে ওয়েলকাম করা আপনারই দায়িত্ব। আপনি হয়ত তাকে আপনার ওয়ার্ক গ্রুপে যুক্ত হতে বলতে পারেন অথবা একদিন লাঞ্চ করার দাওয়াত দিতে পারেন। এতে সে যে শুধু নতুন জায়গা সম্পর্কে জানবে তাই নয়, নতুন কো-ওয়ার্কারদের সম্পর্কেও তার বেশ ভালো একটি ধারণা হবে।
ওয়ার্কপ্লেসে প্রোপার এটিকেট মেনে চলুন
কাজে সময়মতো আসা, সঠিক পোশাক পরা, ফোন সাইলেন্ট করে রাখা ইত্যাদিকে বলা হয় ওয়ার্কপ্লেস এটিকেট। এগুলো মেনে চললে প্রোপার কোওয়ার্কার রিলেশনশীপ প্রমোট হয়। এছারা আরও কিছু উদাহরণ আছে। যেমন- ই-মেইল এটিকেট, অন্যের সাথে কথা বলার সময় গলার স্বর নিচু রাখা, সঠিক ভাষায় কথা বলা ইত্যাদি।
আনন্দ ভাগ করে নিন
এমন কেউ হবেন না যিনি সব ক্রেডিট নিজেই পেতে চান। কারা কারা আপনাকে সাহায্য করেছে এবং কারা চেষ্টা করেছে সবাইকেই মনে রাখুন। আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন, অর্জন সবার সাথে ভাগ করে নিন। এতে আপনার প্রতি সহমর্মিতা বাড়বে। কো ওয়ার্কাররা খুশি হবে।
অ্যাপ্রিশিয়েট করুন
বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কী হয় জানেন? কর্মীদের কাজ এপ্রিশিয়েট করা হয় না। এতে অনেকেই কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কারণেও অনেকে চাকরি ছেড়ে দেয়। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, আপনার কোম্পানিতে ভালো কাজ করছে এমন কেউ এপ্রিশিয়েশন না পাওয়ার কারণে চাকরি ছেড়ে দিক? তাই সহকর্মীর কাজের প্রশংসা করুন। ইংরেজিতে একটি কথা বলে – Honest, encouraging, and thoughtful appreciation costs nothing। এটা যে শুধু সহকর্মীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়, বসরাও যদি ভালো কাজ করে তাহলে তাদেরকেও এপ্রিশিয়েট করুন।
প্রত্যেকের নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন
কোম্পানি যদি অনেক বড় হয়, তাহলে সবার নাম মনে রাখা বেশ কঠিন। তবু যতজনেরটা পারবেন, মনে রাখবেন। আপনি যদি কারও নাম মনে রাখেন এবং সঠিকভাবে উচ্চারণ করেন, তাহলে তারাও বুঝবে যত যাই কিছু হোক না কেন, সে আপনার কাছে ইম্পরট্যান্ট। নাম মনে রাখার সমস্যা বেশি হয় যখন অনেকদিন কারও সাথে দেখা হয় না। তাই কলিগদের সঠিক নামে ডাকলে আপনার প্রতি তাদের সম্মানও বেড়ে যায়। যদি এমন হয় যে, আগের কথা থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা আপনি নতুন করে শেয়ার করছেন, তখন তা আরও বেশি ইম্প্রেসিভ হয়।
কাজে সাহায্য করা
আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজের কাজের প্রতি বেশি ফোকাসড হতে হবে। তবে হ্যাঁ, যদি কাজ শেষে বাড়তি সময় থাকে তাহলে সহকর্মীকে কাজে সাহায্য করতে পারেন। এতে তারা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। এছাড়া তাদের সাথে নতুন কাজ করার এবং আরও ক্লোজ হয়ে কাজ করা যাবে, যেটাতে নতুনভাবে বন্ডিং তৈরি হবে। মনে আছে ছোট বেলায় কেমন বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে স্কুলের প্রজেক্ট তৈরি করতেন? এটাও ঠিক তেমনই। একে অপরকে সাহায্য করা মানে ছোট হয়ে যাওয়া নয়। বরং সম্পর্ক তৈরির নতুন ধাপ এটি।
কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি সহকর্মীদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকে, তাহলে কাজ করতে বেশ অসুবিধা হয়। একে অন্যের সাথে ঝামেলা হয়, কাজ সম্পন্ন হয় না, সর্বোপরি প্রতিষ্ঠান অনেক পিছিয়ে যায়। তাই সবার আগে সহকর্মীদের নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা খুব জরুরি। কীভাবে কো ওয়ার্কাররা নিজেদের মধ্যে গুড রিলেশন প্র্যাক্টিস করতে পারেন তা নিয়েই আজ আলোচনা করলাম। আশা করছি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। করপোরেট লাইফ নিয়ে এমন আরও টিপস জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ছবিঃ সংগৃহীত